‘জীবনের উপর হামলা হতে পারে ‘ বলে ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW প্রধান ঢাকায় এসে শেখ মুজিবুর রহমানকে সতর্ক করেছিলেন।
এটি কি সতর্কতা না হুমকি ছিলো সেটি নিয়ে অনেকের প্রশ্ন, মতামত রয়েছে। অনেকের ধারণা,এ তথ্য দিয়ে ভারত চেয়েছিল বঙ্গবন্ধু জীবন বাঁচাতে ভারত নির্ভর হোক, যাতে ভারত বাংলাদেশকে বাগে রাখতে পারে।মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে যে সহযোগিতা করেছে সেটি অস্বীকার করার নয়। তবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার পেছনে ভারতেরও যে স্বার্থ ছিলো সেটিও বুঝতে হবে। ভারত তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শত্রু পাকিস্তানের শক্তি খর্ব করতে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে আলাদা করতে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিলো। যাতে বাংলাদেশের মাধ্যমেও পাকিস্তানকে চাপে রাখা যায়।
কিন্তু যুদ্ধের পরপরই বাংলাদেশ থেকে দ্রুত ভারতীয় সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহারের জোরালো দাবি, পানিবন্টন, ছিটমহল বিনিময়, ৩ বিঘা করিডোরসহ বাংলাদেশ ভারতের দ্বিপাক্ষিক নানা চুক্তিতে বাংলাদেশের দরকষাকষি,ভারতের আপত্তি সত্তেও মুসলিম দেশসমূহের সহযোগী সংগঠন ওআইসি সম্মেলনে যোগদান, করায় ভারত অখুশি ছিলো।অধিকন্তু কারো সাথে শত্রুতা নয়,দেশের স্বার্থে সকলের সাথে বন্ধুত্ব বঙ্গবন্ধুর এ পররাষ্ট্রনীতিও ভারতের অস্বস্তির কারণ ছিলো বলে অনেকে মনে করেন।
ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো সৎ সাহসী,বিচক্ষণ নেতাকে কোন দেশ নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে না। এটা তারা ঠিকই বুঝেছিলো।তাই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড যে শুধু দেশীয় কোন ষড়যন্ত্র বা বিপদগামী কিছু সেনা সদস্যের কাজ ছিলো সেটি বলার কোন অবকাশ নেই।
বঙ্গবন্ধুবিহীন দেশের অস্থির রাজনৈতিক অঙ্গনে জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে আসা কিছু হলেও এদেশের মুক্তিকামী জনতার কাছে স্বস্তির ছিলো। কিন্তু জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠণে জাতীয়তাবাদীদের উত্থ্যন এবং স্বল্প সময়ে দক্ষ নেতৃত্বে আর্ন্তজাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের সাফল্য, সার্ক গঠণের উদ্যেগ অনেকেরই চক্ষশূল হয়েছিলো। যে কারণে বঙ্গবন্ধুর মতো জিয়াকেও দুর্বৃত্তদের হাতে জীবন দিতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ড যে নিছক কোন দেশীয় ষড়যন্ত্র ছিলো না। সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু আপসোস! দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এই হত্যার প্রকৃত রহস্য,সঠিক তথ্য আজও দেশবাসী পুরোপুরি জানতে পারলো না। খুবই আশ্চর্যের বিষয় ইতিহাসের এসব ঘৃণিত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অভিযুক্তদের কেউ কেউ আজও দাপটের সাথে রাজনীতিতে করে যাচ্ছেন । যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ট্যাঙ্কের উপর নাচানাচি করে পৈশাচিক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলো, তারা বঙ্গবন্ধুর দলের সরকারের মন্ত্রী হয়! যারা বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাবে স্লোগান দিয়েছিল, তারা আওয়ামিলীগের বড় নেতা হয়! ইতিহাসের ঘৃণিত বেঈমান খ্যাত খুনি মুশতাকের মন্ত্রীসভার শপথ পরিচালনাকারী বঙ্গবন্ধু কণ্যার উপদেষ্টা হয়!
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে তোমাদের এই আপোষকামী রাজনীতিকে ধিক্কার জানাই।
১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের নিহত সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি।
ব্যক্তিকে হত্যা করে যেমন তার আদর্শকে শেষ করা যায় না, তেমনি দমন-পীড়ন, গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে গণতন্ত্রকামী, মুক্তিকামী জনতাকে দাবায়ে রাখা যায় না।
‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার,
সরকার হবে জনতার। ‘
‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক,
স্বৈরাচার নিপাত যাক। ‘
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৫ ই আগস্টে এটাই হোক সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকদের শপথ।
নুরুলহক নুর
ভিপি ডাকসু।
সংগৃহীতঃ Nulul Haque Nur পেইজ থেকে।